ছবি:সংগ্রহিত
মৌলভীবাজার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মাগুরছড়া এলাকায় মায়া হরিণ জবাই করে ট্রেনে করে নিয়ে আসার ঘটনায় রেলওয়ে ও বন বিভাগ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
একই সঙ্গে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় বন বিভাগ একটি জিডি করেছে। তবে ঘটনার ১১ দিন পার হলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এতে জেলার স্থানীয় পরিবেশবিদরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুষ্ঠু তদন্তসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গেল ২২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী কালনি এক্সপ্রেস ট্রেন মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ লাউয়াছড়া এলাকার মাগুরছড়ায় এলে ট্রেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মায়া হরিণকে ধাক্কা দেয়। এতে হরিণটি মারাত্মক আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সময় কালনি এক্সপ্রেস থামিয়ে রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা আহত হরিণটি জবাই করে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় নিয়ে যায়।
এরপর জবাই করে নিয়ে আসা হরিণ ও ছোরাসহ ট্রেনের কতিপয় ব্যক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন।
এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি ডায়েরি করে। সেই সঙ্গে সিলেট বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারী বন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার মিত্রকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
একইভাবে রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআইএ) মো. তৌফিকুল আজিমকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
রেলওয়ে বিভাগ স্বল্প সময়ের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে শুক্রবার (৩ মার্চ) ঘটনার দশ দিন চলে যাওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। এতে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো চরম ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে।
লাউয়াছড়া বন ও জৈববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন শ্রীমঙ্গল কমিটির আহ্বায়ক জলি পাল, তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন। একই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে দাশ সুমন রেলওয়ে বিভাগের কর্মীদের এরকম কাজকে বিবেক বহির্ভূত কাজ বলে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ড লাইফের সহকারী পরিচালক খোকন থৌনাউজাম দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলছেন।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, রেলওয়ে বিভাগের কর্মীরা যে এর সঙ্গে জড়িত তার প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে ট্রেন লাইন, সড়ক পথের দুর্ঘটনায় ও বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে গেল এক বছরে কম করে হলেও ১২টি দুর্লভ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শতাধিক বন্যপ্রাণী নানাভাবে আহত হয়েছে।
©পার্ট অফ নিউজ


0 Comments