ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কোনোভাবেই দায়মুক্তির সুযোগ দেয়া হবে না। কোয়াড জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক থেকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।
গত মাসেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এখনও পুরোদমে সংঘাত চলছে। থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই যুদ্ধে শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে তৈরি হয়েছে ‘কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ বা কোয়াড জোট। বিশ্লেষকদের মতে, মূলত চীনকে নজরে রেখেই একজোট হয়েছে চারটি দেশ।
শুক্রবার (৩ মার্চ) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি ২০ বৈঠকের ফাঁকে আলোচনায় বসেন কোয়াডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের সভাপতিত্বে রাইসিনা ডায়লগ ২০২৩ শীর্ষক ওই বৈঠকে অংশ নেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ও মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমরা যদি রাশিয়াকে দায়মুক্তি দিই, তবে এটা সম্ভাব্য আগ্রাসীদের এমন একটি বার্তা দেবে যে, তারা চাইলে যেকোনো কিছুই করতে পারে।’
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিভিন্ন সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। কোয়াড বৈঠকে এই বিষয়টিও উঠে আসে। কোয়াড জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’।
এছাড়া শুক্রবারের এই বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও ওই অঞ্চলের বিতর্কিত এলাকাগুলোকে ‘সামরিকীকরণ’র নিন্দা জানান কোয়াড মন্ত্রীরা। এদিকে কোয়াড শীতল যুদ্ধ শুরুর চেষ্টা করছে বলে নিন্দা জানিয়েছে চীন। একইসঙ্গে এই চক্রটি ‘অন্যান্য দেশকে টার্গেট করে’ কাজ করছে বলেও দাবি করেছে বেইজিং।
এ বছরের জি২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হবে এই সম্মেলন। তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) নয়াদিল্লিতে শুরু হয় জি ২০’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনসহ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
দুদিনব্যাপী এ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য ছিল ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত। তবে শুক্রবার (৩ মার্চ) সংঘাত বিষয়ে কোনো ধরনের মতৈক্য ছাড়াই শেষ হয়েছে সম্মেলন।
ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। সংক্ষিপ্ত ওই বৈঠকে তিনি মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান ও নিউ স্টার্ট পরমাণু চুক্তি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভয়াবহ সুনামির পর যাত্রা শুরু করে কোয়াড। মূলত সেই সুনামির পর যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত; এই চার দেশ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে মানবিক ও দুর্যোগ সহায়তা প্রদানের জন্য একত্রিত হয়। এরপর ২০০৭ সালে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কোয়াডকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দেন।
এরপর প্রায় এক দশক সংগঠনটি সুপ্ত বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। এরপর ২০১৭ সালে জোটের পুনরুত্থান হয়। এতে করে মূলত এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতি পরিবর্তনশীল মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটে।
সেই সময় থেকে প্রথমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এরপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আক্রমণাত্মক উপস্থিতির পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কোয়াডকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
©পার্ট অফ নিউজ


0 Comments