সর্বশেষ

4/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

২১ বছর পার হলো শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার | Part of News

 ছবি:সংগ্রহিত

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় ২০০২ সালের ৪ মার্চ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনের যুগ তখন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার উত্তরবঙ্গ সফরের অংশ হিসেবে নওগাঁয় ছিলেন। সেখানে তার ওপর চালানো হয় সন্ত্রাসী হামলা। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা।

২০০১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতারোহনের পর থেকেই বিশেষ একটি দলের অনুসারী ও সমর্থকরা বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছিল সারা দেশে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির শাসনামলের পাঁচ বছরে ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা। ধর্ষিত হয়ে আত্মহত্যা করে বহু নারী।

এই সময়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা হত্যা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএএস কিবরিয়া, খুলনার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাটের মো. সামসুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরী, সাংবাদিক মানিক সাহা ও হুমায়ুন করিব বালুসহ অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীকে।

সিলেটে  গ্রেনেড হামলা চালানো হয় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর। হামলা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ড. হুমায়ুন আজাদের ওপর। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত মৌলবাদী জঙ্গিরা সারা দেশে ৬৩  জেলা ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। আফগানিস্তানে আল-কায়েদার পক্ষে যুদ্ধ করা জঙ্গিরা সরকারের মদদে গড়ে তোলে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন জেএমবি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। সেদিন অল্পের জন্য রক্ষা পান আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শুধু ২১ আগস্টই নয়, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে বরিশালের গৌরনদীতে, সাতক্ষীরার কলারোয়ায়, রাজশাহীর নওগাঁয় শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসীরা। প্রতিটি হত্যাচেষ্টায় সন্ত্রাসীদের পক্ষে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, বঙ্গবন্ধুর খুখি চক্রসহ তৎকালীন সরকারের নিলজ্জ সমর্থন ছিল লক্ষ্য করার মতো।

১৯৮১ সালে জাতির পিতার কন্যা দেশে ফেরার পর তাকে হত্যার জন্য ২১ বার চেষ্টা করা হয়। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় হত্যাচেষ্টা ছিল তার একটি। ৫ মার্চসহ পরের কয়েকদিনের পত্রপত্রিকায় এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে আসে।

দৈনিক প্রথম আলো শিরোনাম ছিল, নওগাঁয় শেখ হাসিনার গাড়িতে এক যুবকের হামলা, গ্রেপ্তার

মোস্তফা কামাল, নওগাঁ থেকে (৫ মার্চ ): সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ির ওপর গতকাল সোমবার নওগাঁ শহরে হামলা করেছে এক যুবক। সে নিজেকে কর্নেল (অব.) ফারুকের ভাই বলে পরিচয় দিয়েছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নওগাঁ ও গোপালগঞ্জে আজ হরতাল ডেকেছে।... 

শেখ হাসিনা নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক কর্মীসভায় যোগদান শেষে তার গাড়িবহর নিয়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা হন। জেলা আওয়ামী লীগের অফিস থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িবহরের নিরাপত্তা কর্মীদের গাড়িটি পেছনে পড়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িটি পথিমধ্যে থামানো হয়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে রিকশায় আসা দেওয়ান খালিদ বিন হেদায়েত নামের এক যুবক শেখ হাসিনার গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুবকটি গাড়ির পতাকা স্ট্যান্ডটি ভেঙে নিয়ে সজোরে গাড়ির ওপর আঘাত করে। এ সময় ড্রাইভার জালাল দ্রুত গাড়িটি সরিয়ে নেয়ায় আঘাত লাগেনি। পরে খালিদ দ্বিতীয় গাড়ির ওপর হামলা চালায় এবং এতে সামনের একটি গ্লাস ভেঙে যায়। এই গাড়িটিও দ্রুত সামনের দিকে এগিযে নেয়া হলে গাড়িবহরের তৃতীয় গাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়। এতে গাড়িটির পেছনের গ্লাস ভেঙে যায়। এই দুটি গাড়িতে শেখ হাসিনার একান্ত সচিব ও সহকর্মীরা ছিলেন।

পরদিন একটি ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম আলো। ‘হামলা গ্রেফতারকৃত যুবক কর্নেল ফারুকের মামাতো ভাই, কোনো তথ্য দেয়নি।’

রিপোর্টে বলা হয় শেখ হাসিনার গাড়িতে হামলাকারী গ্রেফতারকৃত যুবক খালিদ বিন হেদায়েত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারক রহমানের আপন মামাতো এবং সৎ ভাই। সে নওগাঁ শহরের চকমুক্তার মহল্লায় বসবাস করে। তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত খালিদ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুকের মামাতো ভাই, এক অর্থে সৎ ভাইও। জানা যায়, খালিদের পিতা মারা যাওয়ার পর কর্নেল ফারুকের পিতা ক্যাপ্টেন সৈয়দ আতাউর রহমান তার মাকে বিয়ে করে। তবে এই বিয়ে স্থায়ী হয়নি।

দৈনিক জনকণ্ঠ-এর শিরোনাম ছিল

‘নওগাঁয় শেখ হাসিনার গাড়িতে অতর্কিতে যুবকের হামলা নিজেকে কর্নেল ফারুকের আত্মীয় দাবি, আটক’

কাওসার রহমান, নওগাঁ থেকে (৫ মার্চ) : উত্তরাঞ্চল সফরের তৃতীয় দিনে সোমবার নওগাঁয় বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে। সুঠামদেহী এক যুবক কমান্ডো স্টাইলে শেখ হাসিনার গাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলা চালায়। এ সময় সে বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়ির একটি লোহার ফ্লাগস্ট্যান্ড ভেঙে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে সজোরে আঘাত করে। তার আঘাতে বহরের তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে ফেলে। ধরার সঙ্গে সঙ্গে সে চিৎকার করে বলে, আমাকে কি করবেন, আমি কর্নেল ফারুকের ভাই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলর ঘটনাকে সুপরিকল্পিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেন, সে ‘প্ল্যান্টেড’। মনে হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের সঙ্গে এই হামলার যোগসাজশ থাকতে পারে। লাইসেন্স বাতিল, আজকের হামলা-তারা কি চায়?

সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়ায আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল জলিলের বাড়িতে এক কর্মীসভা শেষ করে মধ্যাহ্নভোজ শেষে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার পথে এই হামলা চালানো হয়। বেলা ২টা ২৬ মিনিটে আব্দুল জলিলের বাড়ি থেকে গাড়িবহর বের হয়ে বিএসসি মহিলা কলেজের সামনে আসা মাত্র উল্টো দিক থেকে রিকশায় করে আসা এক যুবক রিকশা থেকে নেমে কমান্ডো স্টাইলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় সে গাড়ির ডান পাশে দলীয় পতাকা লাগানো লোহার রডের ফ্ল্যাগস্টান্ড ভেঙে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে সজোরে আঘাত করে। 

বিরোধী নেত্রীর গাড়ির ড্রাইভার জালাল মিয়া দ্রুত নিশান পেট্টল (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-০৫২৮) গাড়িটি বাম দিকে সরিয়ে নিলে সে বিরোধী নেত্রীর গাড়ির পিছনের এবং তার পিছনের গাড়িতে আঘাত করে। এতে ঢাকা মেট্টো-জ-৫৮৮৮ নম্বরের গাড়ির এবং ঢাকা মেট্টো-খ-১১-২১৫৯ গাড়ির পিছনের গ্লাস ভেঙে গেছে। বিরোধী দলীয় নেত্রীর গাড়িতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পিছনের গাড়িগুলোতে বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সব সফর সঙ্গী অক্ষত রয়েছেন। দলীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে এই হামলার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ডিএমপি সদস্য জাহাঙ্গীর হামলাকারী যুবককে ধরে ফেলে।

দুদিন পর জনকণ্ঠের নওগাঁ প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ মনির এক ফলোআপ রিপোর্টে উঠে আসে নতুন আরও কিছু তথ্য-‘হামলাকারী যুবক লিবিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফ্রিডম পার্টি ক্যাডার?’

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, একাধিক পত্রিকা খালিদকে পাগল বলে চালানোর চেষ্টা করলেও এসপি তা অস্বীকার করেছেন। তার পরিবারের দাবি সে বিএনপির কর্মী। নাম সর্বস্ব কিছু পত্রিকা তাকে যুবলীগ কর্মী বানানোরও চেষ্টা করেছে। দৈনিক জনকণ্ঠের আরও একটি ফলোআপ রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘খালিদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের দুই লাখ ২০ হাজার টাকার দুটি চেক!’ এতে উল্লেখ রয়েছে দুটো চেকই ইসলামী ব্যাংকের। তার কাছে বেশকিছু চিরকুটও পাওয়া গেছে। একটি আরবি হরফের লেখা। 

জানা গেছে, তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে তাকে হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ এসেছিল। অবশ্য পরে তাকে রংপুরের এসপির কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুরুতেই ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে বিশেষ মহল তৎপর ছিল। তবে এই বিষয়ে মামলা হলেও বিএনপি-জামায়াত সরকার মামলার তদন্ত কাজ থামিয়ে দেয়। ফলে মামলাটি আর এগোয়নি। সব তথ্য উপাত্ত তথা আলামত ধ্বংস করে অপরাধীর পার পাওয়ার রাস্তা বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকতেই করে দেয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার রাতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফিরে এসে দলকে গোছাতে তিনি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করেন। দীর্ঘ ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলের সভানেত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। যেখানে গেছেন তিনি বাধার মুখে পড়েছেন। এই ধরনের হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু  দমে যাননি। সারা দেশে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। শত বাধার মুখেও গণতন্ত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি গণতন্ত্রের মানসকন্যা সারাবিশ্বের গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতীক। তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন বলেই রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে।

জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার ওপর যতবারই হামলা হয়েছে, হত্যার চেষ্টা হয়েছে ততবারই আরও সুসংগঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের কর্মীরা ত্যাগের প্রমাণ দিয়েছে দল এবং নেত্রীর জন্য। সময়ের প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন অসংখ্য কর্মী। তাই এই হামলার ঘটনা মুছে ফেলা যাবে না, যাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে এই মামলাটি পুনরায় চালু করা হোক। একজন খালিদই নয়, নেপথ্যের নির্দেশদাতাদের খুঁজে বের করা দরকার। আজ প্রতিহিংসার নৃশংসতম সেই ভয়াল দিন ৪ মার্চ ২০০২। এই ঘটনাটি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের কুকর্মের দলিল হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)

Post a Comment

0 Comments