সর্বশেষ

4/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার | Part of News

সুন্দরবনে খালে কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার সময় তিন জেলেকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভেসাল জাল, এক প্যাকেট বিষ ও নৌকা জব্দ করা হয়।

                                                    ছবি:সংগ্রহিত

শুক্রবার(৩ মার্চ)দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরনখোলা রেঞ্জের ভোলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকরা হলেন-আসাদুল মল্লিক(২৮),মিরাজুল মল্লিক(৩২),নাঈম মুন্সি(৩৫)। তাদের বাড়ি শরণখোলা উপজেলার মধ্য সোনাতলা গ্রামে।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারে দুষ্কৃতকারী চক্রের অবাধ তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন নদ-নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মৎস্য শিকারের প্রবণতায় হুমকির মুখে পড়েছে বনাঞ্চলে মৎস্য সম্পদের প্রজনন ও উৎপাদন। অসাধু বনরক্ষীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নির্বিচারে চলছে মৎস্য নিধনের অনৈতিক এ কারবার। জেলে নামধারী এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারীদের অতি অল্প সময়ে বেশি মাছ আহরণ ও লাভ হলেও সুন্দরবনের প্রকৃত জেলেরা নিঃস্ব হচ্ছে। আর এ কারণে বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করায় শুধু মৎস্য সম্পদই নয়, হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের জলজ প্রাণীও। এদিকে মাছ শিকারের জন্য বন সংলগ্ন এলাকায় হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে বিষ বা কীটনাশক। কোনো নিয়মের বালাই যেন নেই এসব এলাকার দোকানগুলোতে। মোংলা শহরসহ যে কোনো কীটনাশকের দোকানে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে মাছ শিকারের এ ওষুধ। মোংলা পৌর শহরে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাছ শিকারের নানা ধরনের বিষ। তবে দোকানিদের দাবি, কীটনাশক শুধু যে মাছ শিকারের জন্য ব্যবহার হয় তা নয়, কৃষি জমিতে ফসলের পোকা দমনসহ অন্য কাজেও ব্যবহার হয় এ বিষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ৫ ভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। সুন্দরবনসহ এখানকার অসংখ্য খালে আছে তিন শতাধিক প্রজাতির মাছ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বনবিভাগ থেকে অবশ্য মাছ শিকারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বনের অভ্যন্তরের বেশ কিছু নদ-নদী ও খালকে। সুন্দরবন বিভাগ সূত্র জানায়, পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগ মিলিয়ে পুরো সুন্দরবনের অভ্যন্তরে থাকা মোট চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ১৮টি খালে সব ধরনের জেলে প্রবেশ ও মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। কারণ এ নিষিদ্ধ ১৮টি খালে ডিমওয়ালা মা মাছ ডিম ছাড়ার জন্য অবস্থান নেয়। মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ তা শিকার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। বন বিভাগের খুলনা সার্কেল অফিস সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে নিষিদ্ধ খালে মাছ শিকারের অপরাধে ৪০টির মতো মামলা দিয়ে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত জুনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সময় চার জেলেকে আটক করে কোস্টগার্ড। পরে তাদের খুলনার কয়রা থানায় সোপর্দ করা হয়। এছাড়া গত অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে মরা পশুর নদীর অফিস সংলগ্ন খাল থেকে ৭ জেলেকে বন বিভাগ আটক করে জেলে পাঠায়। ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নেয়ার সময় মোংলার জয়মনির ঘোল থেকে তিন দুষ্কৃতকারীকে আটক করে নৌ পুলিশ।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের(মোংলা সদর দফতর)অপারেশন কর্মকর্তা লে. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরায় শুধু এক প্রকারের মাছের ক্ষতি হচ্ছে না, অন্য সব প্রজাতির মাছই ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি এর সঙ্গে বন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে কঠোর অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোস্টগার্ড। একই সঙ্গে জেলেদের যেসব মহাজন অধিক লাভের আশায় বিষ দিয়ে বনের খালে পাঠাচ্ছে তাদেরও চিহ্নিত করে ধরা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Post a Comment

0 Comments