জয় হল মায়ের ভালবাসার, ৫ তলার বারান্দার দখল ছেড়ে সুস্থ্য সবল ফুটফুটে বাচ্ছাদের নিয়ে সে চলে গেছে নিরাপদ প্রাকৃতিক পরিবেশে ।
গন্ধগোকুল সাধারনত বাসাবাড়ির আশপাশে থাকতে চায় ও ঘরের পরিত্যক্ত স্থানে বাচ্ছা প্রসব করে, যতটা শুনেছি তাদের লোমে রেডিয়েশনের কারনে এক ধরনের স্মেল হয়, যার ফলে সে যে পথ দিয়ে যাবে সে পথের আশেপাশে ক্ষতিকর অনেক জীবানুর ধ্বংস হয় আর এভাবে তারা মানবজাতির সেবা করে, তাছাড়া লোকালয় থেকে ফলমূল খেয়ে বনে মলত্যাগের মাধ্যমে জার্মিনেশন প্রক্রিয়ায় বন্যপ্রাণীর ফলমূলের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি বনের সবুজ ঘনত্ব ও বৈচিত্র সমৃদ্ধ করে। ফসলের শত্রু ক্ষতিকর ইঁদুর, কাটবিড়ালী, সাপ সহ বিভিন্ন ছোট পশুপাখি খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রন করে ইকোসিষ্টেম রক্ষা করে।
প্রায় ৪/৫ সপ্তাহ আগে ফেনীর একজন সরকারী কর্মকর্তার বাসার পাঁচ তলার বারান্ধার কার্নিশে তিনটি সন্তান প্রসব করে গন্ধগোকুলটি, গত সপ্তাহে বাচ্ছাদের কু কা আওয়াজ শুনে বিষয়টি বুঝতে পেরে ৯৯৯ এ ফোন করেন পরিবারটি। আর সেখান থেকে সহযোগীতা চাওয়া হয় ফেনী বন বিভাগের নিকট আর বন বিভাগ সহযোগীতা চায় ফেনীর বন্য প্রাণী প্রেমি যার অসংখ্য বন্যপ্রাণী উদ্ধারের রেকর্ড রয়েছে ফেনীর অন্যতম এনিম্যাল লাভার ও রেসকিউয়ার সাইমুন ফারাবির নিকট।
পরিবারটির কথা ছিল যেকোন মূল্যে আপদ বিদায় করুন নয়ত খাবারের সাথে বিষ দিয়ে মেরে ফেলবে।
বন বিভাগ সহ সাইমুন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানালো জটিল সমস্যাটি, ছোট পরিবার ছোট বাসা তাও তাদের পরিবারের যে মেয়েটি টিকটিকি তেলাপোকা দেখলে চিৎকার চেঁচামেচিতে দুনিয়া এক করে তার রুমের সাথে থাকা কার্নিশে তার অবস্থান। এটি জানার পর থেকে সে খাবার দাবার ছেড়ে রাতে ঘুমাতে না পেরে বরং আতঙ্কে দিন কাটাতে কাটাতে একপ্রকার অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অথচ মা নির্ভয়ে শুয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে বাচ্ছাদের, তার দিকে তাকাতে বা কেউ কাছে যাবার চেষ্টা করলেই হিংস্র চিৎকার দিয়ে জানান দিচ্ছে আমি যাবনা তোমরা যাই কর আপাতত এটাই আমার ঠিকানা ! সারা ঘরে বিদঘুটে গন্ধ ও বাচ্ছাদের চেঁচামেচি আর বাসায় মেয়েটি একা থাকাতে ভয়ে আতঙ্কে বার বার আমাদের তাদের সরিয়ে নিতে অনুরোধ করছিল।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী সংরক্ষন বিভাগের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে অবিহিত করা হয় বিষয়টি। পরিবারটির কাছে অন্তত ১ সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম আমরা যেন বাচ্ছাগুলো পরিপক্ক হয় হাটাচলা করার উপযোগী হয় তার পর সরিয়ে নিব, কিন্তু গত পরশু মা বাচ্ছাদের নড়াচড়া করার সুবিধার্থে উপরের কিছু জিনিস নিচে ফেলে দিলে পরিবারটি আরো এগ্রেসিভ হয়ে উটে সব দপ্তরে যাচ্ছে তাই বলতে থাকে !
পরশু বাচ্ছা ও মায়ের অবস্থান এবং রেসকিউ করার প্রয়োজনীয় উপকরন যোগাড় করে সামি ও তার বন্ধুরা।
গতকাল তাদের সরিয়ে নেবার চেষ্টা করলে সে খুব অসহায় ভাবে বাসায় বসে থাকে বাচ্ছাদের বুকে নিয়ে, সামি নেট দিয়ে ধরার চেষ্টা করতেই সে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে একটি বাচ্ছা মুখে নিয়ে দেয়াল হয়ে বাড়ীর ছাদে চলে যায় পরে ওখান থেকে বিল্ডিং এর নীচে কোথাও অবস্থান নেয়, তারা অপর দুটি বাচ্ছাকে ওখান থেকে খাঁচায় নিয়ে মায়ের অবস্থানে রাখার জন্য খোঁজাখুঁজি করে ব্যার্থ হয়ে যেখানে তাদের জন্ম ও মায়ের সাথে ছিল সেখানেই রেখে আসে। গতরাতে মা তার অপর দুটি বাচ্ছাকেও নিরাপদ ঠিকানায় নিয়ে তাদের বাড়ি থেকে চলে গেছে। ভাল থুকুক তারা, নিরাপদ থাকুক প্রতিটি প্রাণ ।
© পার্ট অফ নিউজ




0 Comments