সর্বশেষ

4/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

আইসিটি খাতে ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব বাজেট চায় বেসিস

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।

গতকাল শনিবার দুপুরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানায় সংগঠনটি। এ সময় বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। এ বিষয়ে সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিংকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে শর্তাদির প্রয়োজনীয় সংশোধনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তবে সিপিটিইউ কর্তৃক ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রণীত সফটওয়্যার ক্রয়ে একটি বিশেষায়িত আরএফপি খসড়া দলিল চূড়ান্ত না করায় সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এর সুফল পাচ্ছে না। আমাদের অনুরোধ থাকবে, বাজেটের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসিস এবং আইসিটি ডিভিশনের সংশোধনী প্রস্তাবনাসহ সফটওয়্যার ক্রয়ে বিশেষায়িত আরএফপি দলিলটি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে।

বেসিস সভাপতি আরও বলেন, বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি। বিশেষ করে আইটি ট্রেনিং ও ইন্টারনেট সার্ভিস সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়নি। আমরা সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারের শুল্ক হার কমানোর প্রস্তাব করেছিলাম। তাছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতির অ্যাকশন আইটেম হিসেবে কর অব্যাহতির সময়সীমা আগামী ২০৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাও বিবেচনা করা হয়নি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে বাংলাদেশকে একটি টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রদানকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে ব্র্যান্ডিং এবং বাংলাদেশের বেসরকারি আইটি ইন্ডাস্ট্রির বাজার সম্প্রসারণে উন্নয়নশীর দেশগুলোতে টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট (টিএ) প্রজেক্টের জন্য ৫০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি তহবিল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

যাতে নারী উদ্যোক্তারা ২ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। বাজেটে টিএ প্রকল্প সম্পর্কে বা আইটি উদ্যোক্তা সৃষ্টির কথা থাকলেও এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখিত নেই। অপরদিকে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে কতখানি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ তা স্পষ্ট নয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বেসরকারি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি বাজার সৃষ্টি এবং সরকারের ডিজিটালাইজেশনে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।

বেসিস বলছে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) তথা ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে যেখানে এ খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা দরকার ছিলো, সেখানে এ খাতে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়সাধ্য করে তুলবে। পাশাপাশি ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে উৎস কর বা অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম মূসকের আওতামুক্ত রাখার দাবি রয়েছে।

এছাড়া আইটি বা আইটিইএসের করপোরেট ট্যাক্স ২০২৪ সাল পর্যন্ত মওকুফ থাকলেও এ খাতে রপ্তানি আয়ের ওপর সরকার প্রদত্ত নগদ প্রণোদনার ওপর ১০ শতাংশ উৎস কর কর্তন করা হচ্ছে। সৈয়দ আলমাস কবীর আরও বলেন, দেশে বর্তমানে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, এয়ারপোর্ট টার্মিনালের মতো প্রচুর পরিমাণে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। অথচ স্থানীয় সফটওয়্যার খাতের খরচ দৃশ্যমান নয়।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নেও বাজেট বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবার জন্য তেমন কোনো বাজেট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি তাতে যদি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা না যায় এবং স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো যদি এসব অবকাঠামোর সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবা প্রদানের সুযোগ না পায় তাহলে প্রকৃত অর্থে এদেশের সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা শিল্প যেমন সম্প্রসারিত হবে না তেমনি বিপুল জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বিনষ্ট হবে। অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনাও বাজেটে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ২৫টি প্রশিক্ষণকে আয়কর অব্যাহতির আওতায় আনা হলেও আইটি প্রশিক্ষণকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সরকার সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবসমূহ বাজেট অধিবেশনে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করবে। একইসঙ্গে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট জাতিকে উপহার দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন বেসিস নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান, পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন ও রাশাদ কবির।

Post a Comment

0 Comments