সর্বশেষ

4/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

করোনায় বিপাকে সাতক্ষীরা জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষ

সম্ভাবনাময় আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী সাতক্ষীরা বর্তমান সময়ে চরম দুঃসময়ের মুখোমুখি জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকা, ব্যবসা বাণিজ্য, চাষাবাদ, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, দৈনন্দিন জীবন যাত্রা, আর্থিক অবস্থা, অতি বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা, সিডর, বুলবুল, আম্ফান সর্বশেষ ইয়াসের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ অতি পরিচিত, চিরচেনা বসতবাড়ি নদীগর্ভে, গ্রামের পর গ্রাম নদীর সাথে একাতা ঘোষণা করেছে, বিলীন হওয়ার পথে এবং অস্তিত্ব সংকটে আশাশুনির ঐতিহ্যবাহী প্রতাপনগর।

শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার কান্না থেমে নেই পদ্ম পুকুর, কৈখালী যেন অভিশপ্ত জনপদ, কালীগঞ্জ আর দেবহাটা ইছামতীর সীমান্ত পারের জনজীবন এর ভাগ্য ইছামতীর রাক্ষুসী পানি নিয়ন্ত্রণ করছে যেন, প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার কাছে জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ অভিশাপের দ্বারে, বিপন্ন মানবতা, বিপর্যস্থ জীবন, বসতবাড়ি, আবাসস্থল পানিতে ভাসছে, হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি, গবাদিপশু, সাপ, ব্যাঙ আর মানব সন্তান এক সাথে বসবাস করছে। বাবা-মা বসতভিটা থেকে সর্বস্ব হারিয়ে খালি হাতে শহরে ফিরছে, কাজের সন্ধানে যারা কখনো কারো কাছে হাত পাতেনি তারা আজ হাত পাতছে, সরকারি, ব্যক্তি সহায়তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

সমৃদ্ধশালী, সম্পদশালী, সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরার এমন চিত্র ভাবা যায় না। কল্পনা করা বৃথা অথচ সেটাই আজ বাস্তবতা। বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রকৃতির রোষাণলে থেকেও এক ধরনের জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল, ঘুরে দাঁড়াতে চাইছিল, ঘুঁরেও দাঁড়িয়েছিল অনেকে কিন্তু বিধিবাম, মহামারি করোনা সাতক্ষীরাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আকড়ে ধরলো, গত বছর দেশে মধ্য মার্চে যখন প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে, সংক্রমণ ঘটে তার অনেক পর দেশের ৬১তম জেলা হিসেবে শেষ এপ্রিলে সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়।

সেই থেকে কখনো সাত-কখনো ১০ ভাগ ছিল সংক্রমন, কিন্তু ঈদুল ফিতরের পর সাতক্ষীরায় দ্রুত অতি দ্রুত করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটতে থাকে। বর্তমান সময়ে তা অতি মাত্রায় এবং সত্যিকার মহামারি আকার ধারণ করেছে। গত পাঁচ জুন থেকে করোনা রোধে সাতক্ষীরায় কঠোর লকডাউন চলছে।

লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। শতকরা হিসেবে ৫৫-৬০ ভাগ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুর খাতায় প্রায় দিন নতুন নতুন নাম সংযোজন হচ্ছে। লকডাউন কোনো সহজ বিষয় নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান পরামর্শক কমিটি, করোনা প্রতিরোধ কমিটি করোনা রোধে লকডাউনই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে যা যথাযথ, কিন্তু বাস্তবতা হলো লকডাউনে ব্যবসা বাণিজ্য, জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটছে, যে কারণে মানুষের মাঝে করোনা ভীতি, করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি আর্থিক দুর্গতি এবং ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। লকডাউন সাতক্ষীরায় কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই পাশাপাশি জীবিকার জন্য হাহাকারও থেমে নেই।

ক্ষুদ্র প্রান্তীক ব্যবসায়ী, হকার শ্রেণি, ফুটপথের ব্যবসায়ীসহ শ্রেণি ভেদে ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে লকডাউন ও পালিত হয় আবার জীবিকার তাগিদের মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, জীবনই আগে, বিধায় লকডাউনের জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত করা যায় কিনা সেটা ভাবনার সময় এসেছে। জেলার অর্থনীতিতে চরম হাহাকার বইছে। লকডাউনের দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকের সবজির, রবি শষ্যের প্রকৃত মূল্য দিচ্ছে না। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য শহরের সময়মতো নিতে পারছে না ডেইরি ফার্মগুলো কষ্টের সময় পার করছে, উৎপাদিত দুধ যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের অভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পোল্ট্রি মুরগি, সোনালি মুরগি, ডিম সব কিছুতেই লকডাউনে ছোঁয়া। সাতক্ষীরার আম দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার স্পর্শ করেছে। কোটি কোটি টাকা আমে বিনিয়োগ করলেও এ মওসুমে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা লকডাউনের দোহাই দিয়ে আম ব্যবসায় কারসাজি এবং অনৈতিকতার ছোঁয়া ফেলেছে।

সাতক্ষীরার আম নির্ভর অর্থনীতিতে হতাশা আর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প ও যথাস্থানে নেই, এখানেই এক শ্রেণি অসাধু ব্যবসায়ীর লকডাউনের দোহাই। সাতক্ষীরা সীমান্ত জেলা হওয়ার সুবাদে ভারতীয় ধারণ সহজেই সাতক্ষীরাকে স্পর্শ করেছে। সীমান্তে কঠোর কড়াকড়ির বিকল্প নেই, পূর্বে বৈধ পথে যাতায়াতকারীরা করোনা প্রাদুর্ভাবে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও অবৈধ যাতায়াত এবং সীমান্ত পারাপার রুখতে হবে, ভোমরা বন্দরে যাতায়াতকারী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক, হেলপার ও শ্রমিকদের বিশেষ নজরদারির বিকল্প নেই।

প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা, আর করোনার অভিশাপে অভিশপ্ত জেলার ব্যবসায়ীরা ঋণের জালে জর্জরিত, একদিকে জীবনযুদ্ধে পরাজয় তার পর এনজিওকর্মীদের কিস্তি আদায়ের লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি হানা, গোলযোগ, চাপসৃষ্টি, বিদ্যুৎবিল পরিশোধের কঠোর আহ্বানে মাইকিংসহ বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিদ্যুৎবিল পরিশোধের তাগিদ নতুবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন সব মিলে জীবনযাত্রা জনমানুষের উদ্বেগ আর সমস্যার শেষ নেই।

বিগত দিনগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা করোনাকালীন সময়গুলোতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিদের ত্রাণ সহায়তা দেখা গেলে এবারের এই চরম অসহনীয় পরিস্থিতিতে বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা নেই। অবশ্য সাতক্ষীরা পুলিশের পক্ষ থেকে পানিবন্দি প্রতাপনগরসহ অপরাপর দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে, সাতক্ষীরার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, জনসাধারণের ব্যবসা বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র গতিশীল ও সচল না হলে সাতক্ষীরা চরম অভিশাপের দ্বারে এবং অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এমন আশঙ্কা সচেতন মহলের।

Post a Comment

0 Comments