সর্বশেষ

4/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ছোট গল্প --- যাত্রা বিরতি


ছবি:সংগ্রহিত

     যাত্রাবিরতি

লেখক : সাদিয়া আহমদ চৌধুরী

নাসিম হয়তো তোমার মনে হয়েছিল ছদ্মনাম নিয়ে ফোনের মাধ্যমে একজন একজনকে চিনাটা, একজন একজনের ছবি না দেখা, অনেক দূরে থাকো বলে না দেখা করার বাহানা কারাটা সবই আমাকে তোমায় ভুলে যেতে দিবে সহজে। ইতোমধ্যে এর আগে ও স্কুল লাইফে একজনকে হারিয়েছিলাম। আর দুই বছর পর আজকে তোমাকে পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলবো কারণ এ দুবছর তুমি হারিয়ে গেলেও তোমাকে পাওয়ার আশাটুকু ছিল। অনেক রাতের ঘুম উবে যাওয়ার কারণ ছিলে তুমি-ই। জানো? আজ অনেক ঘুম পাচ্ছে হয়তো এ বিয়েতে কোনো আগ্রহ নেই তাই, হয়তোবা তিন বছরের অনেক রাতের ঘুম আজ একসাথে আসছে.. তোমায় পাবোনা বলে.. "নিজের মনে বিড়বিড় করে বলতে বলতে কেঁদে ফেললো বিয়ের সাজে সাজা সদ্য নতুন কনে নুপূর। কিছুক্ষণ পরই তার বিয়ে। তাই একেক করে অনেকেই আসলো তাকে এখন নিয়ে যেতে। যার সাথে তার বিয়ে তাকে সে আজই প্রথম দেখবে। এর আগে দেখার সুযোগ থাকলেও কোনো আগ্রহ ছিলনা তার।

নুপূর

"ধরো", এ বলে স্নিগ্ধ আমার হাতে কাগজের একটা টুকরো ধরিয়ে দিলো তারপর কি জানি বলতে গেলে ও না বলে বেরিয়ে পড়লো। বিয়ের পরই আজ তার প্রথম অফিসে যাওয়া। বিয়ের এ কয়েকটা দিনে আমি আমার স্বামী স্নিগ্ধ এর সাথে ঠিক করে কথা ও বলেনি। সম্পর্ক টা বিয়ের হলে ও তা বিয়ের নয় কেন জানি... কেবল কর্তব্যের! কাগজটায় হয়তো সে বলেছে ডিভোর্স চায়.. কে ই বা এমন সম্পর্ক বয়ে নিতে চায়। কিন্তু এত দ্রুত?! 

নুপূর কাগজটা খুলতেই দেখে একটা ফোন নাম্বার। নুপূরের হঠাৎ ঘাম ঝরতে থাকে। "এটা তো দুইবছরের বন্ধ সিমের নাম্বার!" মনে মনে বলতে থাকে সে। কল দিতেই ওপাশ থেকে একটা চেনা কন্ঠ বলে উঠলো "হ্যালো? " 

স্নিগ্ধ 

ঘরে ঢুকেই দেখি আলো নেভানো। নুপূর হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। ভাগ্যিস ফোন করেছিলো তাই জানিয়ে দিতে পেরেছিলাম আজ আসতে দেরি হবে অনেক।

"তোমার নাকি পছন্দ পায়েস? মা থেকে শুনলাম.. তাই আজ পায়েস রান্না করলাম... খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে, "অনেকটা আদুরে স্বরে কিছুটা ইতস্ততভাবে বললো নুপূর। আজ হঠাৎ আমার পছন্দের খাবার রান্না করলো.. ব্যাপার কি? যে মেয়ে আমার দিকে ঠিক করে ফিরে ও তাকায়না... কথা বলা তো দূরের কথা.. সে আজ...

"কেমন?" নুপূরের প্রশ্নে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে হকচকিয়ে উঠলাম। "হ্যাঁ, খুব ভালো হয়েছে"। ওর চোখেমুখে সাথে সাথে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। না..মেয়েটার হাসিতে অদ্ভুত মায়া আছে। এ মায়াময় হাসিটা ও যেন একদম অনেক চেনা ছোটবেলার আমার সেই নুপূরের হাসির মতো একেবারে। আমিও মুচকি হেসে উঠলাম।

******

"তোমায় আমি চিনিনা আবার বোধহয় চিনি..." গানটা সাউন্ড বক্সে চালানো হাই ভলিউমে। নুপূর শাড়ি পড়ে নিয়েছে। আজ স্নিগ্ধের বন্ধু একটার বিয়েতে যাবে স্নিগ্ধের সাথেই। "হ্যাঁ, স্নিগ্ধ তোমায় আসলেই চিনিনা আবার বোধহয় চিনি" - মনে মনে ভাবতে থাকলো নুপূর। 

স্নিগ্ধ

শাওয়ার শেষে বের হয়ে এসে দেখি বিছানার উপর নুপূর অনেক সুন্দর করে স্যুট, টাই, শার্ট, প্যান্ট রেখে গিয়েছে নিজের পছন্দমতো। কয়েকদিন আগে ও এমনটা সময় কড়াসুরে জিজ্ঞেস করতো "কোনটা??? কোন রঙ??" আর আজ...

বের হচ্ছি এমন সময় নুপূর ডাক দিলো তার শাড়ির পিনটা আটকিয়ে দিতে, ও আটকাতে পারছেনা। ওর হাত থেকে পিন নিতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম হাতের তিলটা দেখে। একদম একই জায়গায় ঠিক এমনটাই আমার সেই নুপূরের হাতে ও তিল ছিল। আমার ছোটবেলার ভালোবাসা ছিল সে। কেন এতো মিল এ নুপূরের সাথে ঐ আগের নুপূরের??

********

"না আমি একা কলেজে যেতে পারবো স্নিগ্ধ..আর তোমার অফিসের উল্টো পথেই তো আমার কলেজ.." বললো নুপূর স্নিগ্ধকে। "আরে না, আমার কোনো সমস্যা নেই তুমি চলো তো!" 

"তুমি ঐদিন ও নিজের অফিসটা মিস দিয়ে ফেলেছিলে আমাকে কলেজে দিয়ে আসতে গিয়ে। আর স্নিগ্ধ এভাবে তো প্রতিদিন সম্ভব না তোমার চাকরির জন্য ও ভালোনা। পড়ে চাকরিটা হারাবা। আর এমনে ও বিয়ের পর কয়েক সপ্তাহ আমি একাই আসা-যাওয়া করেছি।"

"তখন দিয়ে আসতাম না বলে এখন ও দিয়ে আসবোনা? আজকাল পরিস্থিতি অনেক খারাপ। বলা যায় না কখন কী হয়।" এটা বলে নুপূরকে ইশারা করে ওর বাইকের পিছনে বসতে। নুপূর অজান্তেই কিছুটা মুচকি হেসে উঠে পড়লো। চেনা কথাটা যেন কোনো এক চেনা মানুষের মতোই যেন।

*******

সুন্দর নীল শাড়ি, কালো টিপ, নীল চুড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজে ফেললো নুপূর। আজকে সে অনেক খুশি। কারণ স্নিগ্ধ ক্যান্ডেল নাইট ডিনারে ডেকেছে তাকে। কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা বলবে বললো তাকে। নুপূর আনমনে আয়না তাকিয়ে খোলা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ভাবছে হয়তো নাসিম ওরফে স্নিগ্ধ তার নুপূরকে চিনতে পেরেছে হয়তো,তার সেই ভালোবাসার মানুষকে হয়তো!

[লাল, নীল রঙের মোমবাতি জ্বালানো রেস্টুরেন্টের টেবিল, চারপাশে অনেক কাপল কিন্তু শান্ত-চুপচাপ পরিবেশ ]

"জানো? ছোটবেলায় আমার একটা ভালোবাসা ছিল তার নাম নুপূর। আমার বেস্ট ফেন্ড ছিলো।" স্নিগ্ধ যখন নীরবতা ভেঙে নুপূরকে একথা বলে উঠে তখন নুপূর হকচকিয়ে তাকায় স্নিগ্ধের দিকে।

"সে নুপূরের সাথে জানো তোমার অনেক মিল। তোমার হাতের তিলটা, হাসিটা, অভিমানটা সবটাই।" নুপূর অবাক হয়ে চেয়ে থাকে স্নিগ্ধের কথা শুনে। "আচ্ছা তুমি কি সে-ই নুপূরই? যে নুপূরের সাথে রিক্সাভাড়া জমিয়ে হাওয়ায়ই মিঠাই খেতাম, স্কুল পালিয়ে ঘুরতে যেতাম, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যান্টিনে খেতাম??"

নুপূরের চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। স্নিগ্ধ খুশিতে বলতে যাবে যে সে তাকে ৭ বছর ধরে খুঁজেছে কত তখনই--

"নাহ্" বলে উঠলো নুপূর," এটা হতে পারেনা!"কাঁদতে থাকে অনবরত। 

স্নিগ্ধ বুঝতে পারলোনা ব্যাপারটা কি।

"না, তুমি তারমানে নাসিমনা! আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার সেই ছদ্মবেশী নাসিম।"

দুইজনেই হারনোর ব্যাথায় এক থমথম নীরবতায় ভেঙে পড়ে।

কিছুক্ষণ নীরবতার পর..

"কিন্তু আমি তোমাকে...!" দুজনেই একসাথে বলে উঠলেই আবার থেমে গিয়ে দুজন দুজনের চোখ দেখেই বুঝতে পারলো, দুজন দুজনকে আসলে ভালোবেসে ফেলেছে এ কয়েক মাসে। দুজনেই চোখে জল নিয়ে মুচকি হেসে উঠলো। এতদিনের মায়ায় একজন একজনকে যে কতটুকু ভালোবেসে ফেলেছে তারা তা নিজেরা ও জানেনা। হয়তো একসাথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তারা। হয়তো যে মায়াকে ঘিরে এত ভালোবাসা তা শুধু ধারণাকৃত মিথ্যে অতীতের উপর নয় হয়তো? হয়তো বর্তমানের নিজেদের মায়াকে ঘিরেই তাদের ভালোবাসা। দুজনের অতীত বয়ে নিয়ে যাওয়ার যাত্রার ইতি না ঘটে না হয় বিরতি-ই ঘটলো। 



প্রকাশকঃ পার্ট অফ নিউজ 

Post a Comment

1 Comments